বিস্ময়কর কোরআন

মহাবিশ্ব ও পরকাল সম্পর্কে কুরআনিক জীবনদর্শন

মহাবিশ্বে আমাদের ভূমিকা কী?

এইবার আমি আপনাদের একটি হেলিকপ্টার ভিউ দিতে চাই—একটি এমন বিষয়ের ওপর, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি এমন বিষয়, যা বহু, বহু মানুষের মনে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন হয়ে আছে।

এই বিষয়টি হলো:
এই মহাবিশ্ব আসলে কী নিয়ে?
আমরা এখানে কেন?
আল্লাহ আমাদের এই মহাবিশ্বেই কেন সৃষ্টি করলেন?
আর এই মহাবিশ্ব আদৌ কেন আছে?

এগুলো সত্যিই বড় প্রশ্ন।

এই প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজে পেতে আমাদের একটি যাত্রা করতে হবে—কয়েকটি শব্দের মধ্য দিয়ে।
কিছু নির্দিষ্ট শব্দ—যেগুলোর সংজ্ঞা আমরা খুবই স্পষ্টভাবে, নির্দিষ্ট একটি রূপে দেব ইন শা আল্লাহ—যেমনটা আগে কখনো হয়তো করা হয়নি।

আর ইন শা আল্লাহ, আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাবো, যেখান থেকে এই প্রশ্নগুলোর সরাসরি উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে।

তবে খেয়াল রাখবেন, এই অংশে আমরা খুব বেশি প্রমাণ উপস্থাপন করব না—কারণ বিষয়টি এত বিশাল, এত ব্যাপক যে, প্রথমে আমাদের এটিকে অনেক উচ্চতার একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে—তা বোঝার জন্য।

আমরা অবশ্য বিভিন্ন উপায়ে এই প্রমাণ উপস্থাপন করে থাকি।

এর একটি উপায় হচ্ছে MQ Live সেশনগুলোর মাধ্যমে।

আজ, আমদের আলোচনা হচ্ছে কুরআনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জীবন সম্পর্কে— এই মহাবিশ্বে এবং পরকালে।

কুরআনের সংজ্ঞায় জীবন দুটো আলাদা পরিসরে বর্ণিত হয়েছে, কেবল একটিতে নয়।
প্রথমটি হলো—এই পার্থিব মহাবিশ্বে জীবন।
আর দ্বিতীয়টি হলো—পরকালীন জীবন।

আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করব। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো হলো:

এই মহাবিশ্ব কী?
এই মহাবিশ্ব কেন?
এর অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কী?
আল্লাহ আমাদের কেন এই মহাবিশ্বের ভেতর সৃষ্টি করলেন?
আর সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—
এই মহাবিশ্বে আমাদের ভূমিকা কী?

এখানে মনে রাখতে হবে: “মহাবিশ্ব” শব্দটি কেবল পার্থিব বা বস্তুগত জগত বোঝায় না—
বরং এটি অন্তর্ভুক্ত করে উভয় জগতকেই:
এই পার্থিব জীবন এবং পরকালীন জীবন।

এই অংশে আমরা এই মূল প্রশ্নটি আলোচনা করব, এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনটি নির্দিষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা পরিভাষা তুলে ধরব—
যেগুলো কুরআনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অস্তিত্বকে বোঝার জন্য অত্যন্ত জরুরি:

1. Ad-Deen – الدِّين
দ্বীন

2. Al-Mulk – الْمُلْك
মুলক

3. Al-Malāʾikah – الْمَلَائِكَة
মালায়িকা — ফেরেশতাগণ

আদ্-দ্বীনের অর্থ নিয়ে আলোচনা

প্রচলিতভাবে, “আদ্-দ্বীন” শব্দটি সাধারণত “ধর্ম”, “জীবনব্যবস্থা” অথবা “আল্লাহর প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের একটি কাঠামো” হিসেবে বোঝানো হয়। এই ব্যাখ্যাগুলি পুরোপুরি ভুল নয়—বরং শব্দটির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি তুলে ধরে। তবে এই প্রেজেন্টেশনে আমরা একটি আরও বিস্তৃত এবং সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে যাচ্ছি, যা পূর্ববর্তী ব্যাখ্যাগুলোর উপর ভিত্তি করে গঠিত, কিন্তু তার পাশাপাশি আরও গভীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উন্মোচন করে।

Marvelous Qur’an চ্যানেলের পূর্ববর্তী আলোচনাগুলিতে, আমরা “আদ্-দ্বীন”-কে একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছি—অর্থাৎ এমন একটি ব্যবস্থা যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত, সংজ্ঞায়িত বা বর্ণিত। এই সংজ্ঞা সম্পূর্ণরূপে বৈধ এবং কুরআনের পাঠ্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। তবে এখন আমাদের লক্ষ্য হলো এই ব্যাখ্যাটিকে আরও প্রসারিত করা।

এই বৃহত্তর ব্যাখ্যায় “আদ্-দ্বীন” এখনও সেই প্রতিষ্ঠিত ঐশী ব্যবস্থাকেই বোঝায়, কিন্তু এর মধ্যে একটি নতুন ও বিস্ময়কর মাত্রা যুক্ত হয়—একটি গভীর গাঠনিক ধারণা যা শব্দটির মধ্যে নিহিত।

ভাষাগত অন্তর্দৃষ্টি: সূরাহ ইউসুফ

এই বিষয়ে উদাহরণ দেওয়ার জন্য, আমরা সূরাহ ইউসুফের একটি আয়াতে ফিরে যাই, যেখানে “দ্বীন” শব্দটি একটি গভীর প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়েছে:

“দ্বীন আল-মালিক” — অর্থাৎ, রাজার প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা
(কুরআন, ১২:৭৬)

এখানে দ্বীন স্পষ্টভাবে একটি সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝাচ্ছে—একটি প্রচলিত ব্যবস্থা যা সেই রাজার সময়ে স্বীকৃত ও কার্যকর ছিল। এটি “দ্বীন”-এর এমন একটি ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে, যেখানে এটি নির্দিষ্ট একটি পরিপ্রেক্ষিত বা কর্তৃত্বাধীন ব্যবস্থায় একটি সচল, প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত।

একটি সেট এবং এর সদস্যরা

এখন আমরা একধাপ এগিয়ে একটি সম্প্রসারিত ব্যাখ্যায় প্রবেশ করি:

আদ্-দ্বীন কেবল সেই প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকেই বোঝায় না, বরং সেই ব্যবস্থার সদস্যদেরও বোঝায়।

এর মানে কী?

এর মানে হলো, “আদ্-দ্বীন” এমন একদল ব্যক্তি—এই জাগতিক জীবনে হোক বা আখিরাতে—যারা সচেতনভাবে আল্লাহর নির্ধারিত ব্যবস্থার অনুসারী, জীবনে তা ধারণ করে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের গঠন করে। এই ব্যক্তিরা নিছক কোন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নয়; বরং তারা এই ব্যবস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং প্রতিনিধিত্বকারী।

এটিকে গাণিতিক “সেট” বা সমষ্টির সঙ্গে তুলনা করা যায়:
আপনি যেমন “জোড় সংখ্যার সেট” বলতে পারেন, আবার একই সেটের সদস্য অর্থাৎ ২, ৪, ৬—এই সংখ্যাগুলোকেও আলাদা করে বলতে পারেন—কিন্তু সেটটির নাম অপরিবর্তিত থাকে।

ঠিক সেই একইভাবে, আদ-দ্বীন উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়:

১. একটি বিমূর্ত, কাঠামোবদ্ধ, আল্লাহর প্রদত্ত ব্যবস্থা, এবং

২. সেই সকল সচেতন আত্মার সমষ্টি—যাঁরা জীবিত অবস্থায় কিংবা পরকালে—সজ্ঞানে সেই ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নেন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার অন্তর্ভুক্ত হন।

এই দ্বিস্তরবিশিষ্ট ব্যাখ্যা—একদিকে একটি ঐশী ব্যবস্থা এবং অপরদিকে তার অনুসারীদের সমষ্টি—“আদ্-দ্বীন” শব্দটিকে একটি বহুমাত্রিক এবং গভীর সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থে উন্মোচিত করে।

এই দৃষ্টিভঙ্গিই হবে আমাদের এই উপস্থাপনার ভিত্তি, যার মাধ্যমে আমরা দ্বীন শব্দটির এক পূর্ণাঙ্গ ও গভীরতর উপলব্ধি উপস্থাপন করব।

মুলক (مُلْك) কী?

“মুলক” (مُلْك) শব্দটি সমগ্র সৃষ্টিজগতের “শাসনব্যবস্থা”কে বোঝায়, যা অন্তর্ভুক্ত করে কেবল:

  1. এই জীবনে আমরা যেটিকে দৃষ্টিগোচর ভৌত জগৎ হিসেবে জানি—তাই নয়,

  2. বরং এমন সব অদৃশ্য জগৎ, যেগুলো এই জীবনে আমাদের উপলব্ধির বাইরে রয়ে যায়।

অর্থাৎ, মুলক হলো এমন এক সর্বব্যাপী শাসনব্যবস্থা, যা আল্লাহর অধীন এবং যার আওতায় রয়েছে সবকিছু—দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য, পার্থিব এবং অপার্থিব—সমস্ত সৃষ্টিজগৎ

আমরা এখন গভীরে প্রবেশ করব শাসনব্যবস্থা বা গভর্ন্যান্স নামক ধারণাটির ভিতরে। আমরা এটিকে বিস্তারিতভাবে সংজ্ঞায়িত করব।

এর জন্য আমরা একটি উদাহরণ ব্যবহার করব—একটি ম্যাকডোনাল্ডস রেস্টুরেন্ট। এরপর আমরা এই উদাহরণটি নানা দিক থেকে প্রয়োগ করব—যাতে করে আমরা বুঝতে পারি এই মহাবিশ্বে আমাদের ভূমিকা কীভাবে কাজ করে।

যখন আমরা শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি বুঝে ফেলি—যা কুরআন আমাদের সামনে উপস্থাপন করে—তখন আমরা পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারি যে, আমাদের ভূমিকা কুরআনের আলোকে কীভাবে নির্ধারিত হয়, এবং এই মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্বের প্রকৃত অর্থ কী।

কুরআনে “মুল্‌ক” (مُلْك) শব্দটি আসলে যেটিকে আমরা আজকের ইংরেজিতে “governance” বলি—তার অর্থ বহন করে। এটি “dominion” অর্থাৎ কর্তৃত্ব বা দমন নীতির দিকে ইঙ্গিত করে না।

Dominion শব্দটি দমন ও শক্তিপ্রয়োগের ধারণা বহন করে। অবশ্যই, আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর পরিপূর্ণ আধিপত্য ও কর্তৃত্ব রাখেন, কিন্তু একইসাথে আমরা জানি, মানবজাতিকে আল্লাহ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি (free will) প্রদান করেছেন। সেই কারণে, কুরআনের অনুবাদে অন্যান্য বহু অনুবাদক যেভাবে “dominion” ব্যবহার করেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়।

মানবজাতির ক্ষেত্রে dominion শব্দটি ব্যবহার করা যায় না। কারণ আমরা আল্লাহর পরম সার্বভৌমত্বের অধীনে থাকলেও, আমাদের জন্য মুক্ত ইচ্ছার অনেক পরিসর রয়েছে। তাই free willdominion—এই দুটি ধারণা কিছুটা পরস্পরবিরোধী।

আল্লাহ আমাদের ওপর জোরপূর্বক দমন করেন না; বরং তিনি আমাদেরকে অনেক বেশি স্বাধীন পরিসর দেন—বেছে নেওয়ার, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেন।

এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চিন্তা করলে বোঝা যায়, governance শব্দটি অনেক বেশি সঠিক। এটি এমন এক নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো বোঝায় যার ভিতরে আমরা পরিচালিত হই, কিন্তু যার মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির যথেষ্ট জায়গা রয়েছে

আশা করি আপনি এই সূক্ষ্ম পার্থক্যটি উপলব্ধি করতে পারছেন। এটি কিছুটা দার্শনিক মনে হতে পারে, কিন্তু এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষ করে কুরআনের প্রতিটি শব্দের যথাযথ ইংরেজি অনুবাদ করতে হলে।

আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ম্যাকডোনাল্ড’স (McDonald’s)-এ গিয়েছেন, কিংবা অন্তত এমন কোনো রেস্তোরাঁয় গিয়েছেন যা ম্যাকডোনাল্ড’স-এর মতো। সেখানে কীভাবে কাজ চলে, তা আপনি দেখতে ও কল্পনা করতে পারেন। আমরা এই উদাহরণটি ব্যবহার করবো আমাদের বোঝাপড়াকে আরও স্পষ্ট ও দৃঢ় করার জন্য—ধারণাটিকে একটি বিমূর্ত স্তর থেকে নামিয়ে এনে একটি বাস্তব ও কার্যকরী স্তরে আনার জন্য, যেন আমরা সবাই সেটা বুঝতে পারি। আর সেটিই আমাদের সাহায্য করবে মহাবিশ্বের ধারণাকে বুঝতে—যেমনটি আপনি পরে দেখতে পাবেন।

সুতরাং, এই জীবনে আমরা যেটিকে “পার্থিব মহাবিশ্ব” হিসেবে চিনি, সেটি আসলে governance বা শাসনব্যবস্থার একটি অংশমাত্র—বা বলা যায়, সেটি সেই শাসনব্যবস্থার আওতাভুক্ত।

কিন্তু কুরআনে যে “মুল্‌ক” (মুলক/গভর্নেন্স) বর্ণনা করা হয়েছে, তা এই জাগতিক মহাবিশ্বের তুলনায় অনেক বিস্তৃত। এটি কেবল দৃষ্টিগোচর বা পরিমাপযোগ্য বাস্তব জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

যারা আধুনিক বিজ্ঞান—বা scientism—এর প্রতি গভীর মোহে আচ্ছন্ন, তারা ভাবেন আধুনিক বিজ্ঞানই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়, এরাই হল সেইসব ‘militant atheist’, যেমন রিচার্ড ডকিন্স (Dawkins) প্রমুখ, যারা বিজ্ঞানের প্রতি এতটাই অন্ধ প্রেমে পড়েছে যে নিজেরাই নিজেদের তত্ত্বগুলো একের পর এক খণ্ডন করেও তা বুঝতে চান না। তারা এমনভাবে বিজ্ঞানে মগ্ন যে অন্য কোনো অস্তিত্ব বা জগতকে একেবারে অস্বীকার করে বসেন

কিন্তু কুরআনে ‘মুল্‌ক’ বা গভর্নেন্স কেবল এই পার্থিব মহাবিশ্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সেইসব অদৃশ্য জগতকেও অন্তর্ভুক্ত করে, যা এই পার্থিব জীবনে আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। আমি বলছি না যে সবার ক্ষেত্রেই এমন হয়, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই এমন মনে হয় যে, এই দৃশ্যমান জগতটাই সব কিছু—যেটিতে আলো আছে, দরজা আছে, আকাশ আছে, জমিন আছে—যা কিছু আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে পারি—অর্থাৎ যা অভিজ্ঞতামূলকভাবে যাচাই করা যায়—তার বাইরে কিছুই নেই।

অনেকে সত্যিই মনে করেন, এই দৃশ্যমান জগতটাই সব কিছু

কিন্তু কুরআন এ কথা বলে না

কুরআন স্পষ্টভাবে বলে, এই জাগতিক মহাবিশ্ব কেবল অস্তিত্বের একটি অংশমাত্র।

অতএব, যখন আল্লাহ ‘আল-মুল্‌ক’ বা শাসনব্যবস্থার কথা বলেন, তখন সেটি কেবল এই দৃশ্যমান বা শারীরিক মহাবিশ্ব নয়—বরং সমগ্র সত্তা ও জগতসমূহকে ঘিরে থাকে, যেসবের উল্লেখ কুরআনে এসেছে—হোক তা দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান।

কুরআনে “مُلْك” (মুল্‌ক) বা Governance বলতে কী বোঝায়?

Governance বা শাসনব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে:

1. Terminology and its Definitions, পরিভাষা ও তার সংজ্ঞাসমূহ
2. Roles, ভূমিকাসমূহ
3. Dues & Responsibilities, প্রাপ্য ও দায়িত্বসমূহ
4. Authorities & Domains of Action, কর্তৃত্ব ও কার্যপরিধি
5. Rules, নিয়মাবলি
6. Policies, নীতিমালা
7. Procedures, প্রক্রিয়াসমূহ
8. Actions and Their Implications (Results), কাজ ও তার পরিণতি (ফলাফল)
9. Domains of Application for each of the above, উপরোক্ত প্রতিটির প্রয়োগ ক্ষেত্র
10. Exceptions, ব্যতিক্রমসমূহ

1. Terminology and its Definitions, পরিভাষা ও তার সংজ্ঞাসমূহ

আমরা সরাসরি ম্যাকডোনাল্ডস স্টোর বা ম্যাকডোনাল্ডস রেস্টুরেন্টের একটি উদাহরণের মাধ্যমে প্রবেশ করব, যাতে আপনি বোঝতে পারেন কীভাবে “গভর্নেন্স” বা শাসনব্যবস্থা—যা একটি বিমূর্ত ধারণা—বাস্তব জীবনে কাজ করে।

গভর্নেন্স বা শাসনব্যবস্থা অনেক অনেক বিষয়ের সমন্বয় এবং এটি নির্ভর করে আপনি কোন ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করছেন তার ওপর। উদাহরণস্বরূপ, আপনি এটি কর্পোরেট বোর্ডের শাসনব্যবস্থায় প্রয়োগ করতে পারেন, তথ্য শাসনে প্রয়োগ করতে পারেন, আইন, বিধান ও বিচার ব্যবস্থার শাসনে প্রয়োগ করতে পারেন — এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে। শাসনব্যবস্থার শব্দের সঙ্গে নানা ধরনের প্রয়োগ ক্ষেত্র যুক্ত হতে পারে।

চলুন ফোকাস করি: শাসনব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে প্রথমত তার নিজস্ব শব্দভাণ্ডার — টার্মিনোলজি — এবং সেই শব্দগুলোর সংজ্ঞা।

2. Roles, ভূমিকাসমূহ

এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা এজেন্টদের বিভিন্ন ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত থাকে। অর্থাৎ, গভর্নেন্স বা শাসনব্যবস্থা এক ধরনের সিস্টেম বর্ণনা করে — তা হয় ইতিমধ্যে বিদ্যমান একটি সিস্টেম, বা হতে পারে ভবিষ্যতে তৈরি হওয়ার মতো একটি সিস্টেম।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো কর্পোরেশনে যখন আপনি একটি নতুন বিভাগ তৈরি করছেন, তখন আপনি সেই বিভাগের জন্য শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ করেন বা নির্ধারণ করেন সেই শাসনব্যবস্থা যার ,ঠয়
মধ্যে ওই বিভাগ কাজ করবে।

একইভাবে, যখন আপনি কোনো নতুন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তৈরি করছেন, কিংবা যখন আপনি কোনো পরিবার গঠন করছেন — অর্থাৎ, এক পুরুষ ও এক স্ত্রী একসঙ্গে একটি নতুন পারিবারিক ইউনিট বা পরিবার তৈরি করছেন।

এখন আমরা বুঝতে পারছি, আমরা কিছু নতুন কিছু তৈরি করতে যাচ্ছি। তাই, যারা নতুন পরিবার গড়ার পথে আছেন, শুরু করার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি শাসনব্যবস্থার কথা ভাবছেন।

শাসনব্যবস্থায় কী কী অন্তর্ভুক্ত? এতে রয়েছে শব্দভাণ্ডার; অর্থাৎ, সাধারণ বা ভাগাভাগি করা শব্দগুলোর সংজ্ঞা। এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ যে একই সংস্কৃতি বা পটভূমির দুই ব্যক্তি একসঙ্গে পরিবার গঠন করেন। এটা অবশ্য একমাত্র উপায় নয়, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে অনেক সহজ হয়, কারণ তারা একই ভাষায়, একই শব্দভাণ্ডারে কথা বলতে পারে — যা খুবই সহজ।

ভূমিকা বা Roles: ভূমিকার গুরুত্ব, ভবিষ্যতের যে কোনও সত্তায় বা সৃষ্টিতে পক্ষগুলো কী ভূমিকা রাখবে।

আপনি পরিবার গড়ছেন, কোম্পানি গড়ছেন, কোনো কোম্পানির ভিতরে একটি বিভাগ গড়ছেন — এসবের জন্যই ভূমিকা নির্ধারণ প্রয়োজন।

নতুন কোম্পানিটিতে সিইও’র ভূমিকা কী? এই কোম্পানির গেটকিপারের ভূমিকা কী? কতজন ম্যানেজারের প্রয়োজন— হিসাবরক্ষণ ম্যানেজার, কম্পিউটার সায়েন্স বা প্রোগ্রামিং ম্যানেজার, পার্সোনেল বা মানব সম্পদ ম্যানেজার ইত্যাদি?

প্রত্যেকটি ভূমিকা অনেক দিক থেকে সুসংহত এবং স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হতে হবে।

3. Dues & Responsibilities, প্রাপ্য ও দায়িত্বসমূহ

যদি আমরা কর্মচারী নিয়োগ দিতে চাই, তাহলে প্রতিদান কিভাবে দেওয়া হবে? শুধুমাত্র স্টক অপশন দিয়ে? কোম্পানির মালিকানার অংশ দিয়ে? নির্দিষ্ট বেতন দিয়ে? নাকি ঘণ্টাভিত্তিক পারিশ্রমিক দিয়ে?

এই সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য আগে থেকেই নির্ধারিত থাকা দরকার।

এছাড়াও, প্রতিটি সদস্য বা এজেন্টের দায়িত্ব থাকতে হবে—দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন পরিবারের ক্ষেত্রে, পরিবারের প্রতিটি ভূমিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব বা কর্তব্য কী হবে?—সেটাও স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

4. Authorities & Domains of Action, কর্তৃত্ব ও কার্যপরিধি

এছাড়াও, কর্তৃত্বের বিষয়টি রয়েছে—প্রত্যেকটি ভূমিকা বা এজেন্টের উপর যে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে, তা কী মাত্রায় কার্যকর হবে—এবং সেইসাথে তাদের কর্মক্ষেত্র বা প্রভাবের সীমানা। উদাহরণস্বরূপ, হিসাবরক্ষণ বিভাগের একজন ব্যক্তি তার হিসাব সংক্রান্ত কাজ সম্পাদনের জন্য প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন ধরনের তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে, কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কর্মক্ষেত্রে কাজ করে—তাদের দৃষ্টিসীমা, সিদ্ধান্তগ্রহণের স্তরও আলাদা।

5. Rules, নিয়মাবলি

6. Policies, নীতিমালা

এই নবগঠিত বা বৃহৎ সত্তাটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কী কী নিয়ম প্রযোজ্য হবে?—ইত্যাদি।

আপনি যেমন দেখতে পাচ্ছেন, আল্লাহ কুরআনে দ্বীনের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কেও অনুরূপ বহু বিশদ নির্দেশনা প্রদান করেছেন—অর্থাৎ, আল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা কাঠামো। এখন আমরা এসব শব্দ, এসব ধারণাকে কুরআনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারি। হ্যাঁ, এই ধারণাগুলো কুরআনের মধ্যেই রয়েছে—নিঃসন্দেহে রয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, যখন আমরা ইউসুফের কাহিনি অধ্যয়ন করি, তখন আমরা পাই “dīn al-malik”—অর্থাৎ, রাজা কর্তৃক গৃহীত, নির্বাচিত অথবা আরোপিত প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থার কথা। তাহলে এখন আমরা বুঝতে পারি, রাজা যাদের উপর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করছেন—সেই সামগ্রিক পরিসর, যেন এক ক্ষুদ্রজগৎ—তাকেও “dīn” বলা হয়েছে। আর সেই পরিসরের জন্য আমরা “governance” (শাসনব্যবস্থা) শব্দটি ব্যবহার করি, পূর্বে ব্যাখ্যা করা যুক্তির ভিত্তিতে।

সেই রাজ্যের শাসনব্যবস্থা সকল অধিবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেরই তা বোঝা প্রয়োজন: উদাহরণস্বরূপ, কী নীতিমালা (policies) প্রযোজ্য?

আমরা যেমন দেখতে পাব McDonald’s-এর ক্ষেত্রে: যদি কোনো কর্মচারী থাকে—নীতি কি তাকে বাসা থেকে কাজ করার অনুমতি দেয়? McDonald’s-এর মতো প্রতিষ্ঠানে, স্বাভাবিকভাবে, এটি উপযুক্ত নয়। কিন্তু যদি সেই ব্যক্তি একজন হিসাবরক্ষক হন এবং তার প্রতি সপ্তাহে ৩০–৪০ ঘণ্টা কাজ সম্পন্ন করার নিয়োগ থাকে, তাহলে হয়তো তার কিছু অংশ বাসা থেকেও করা যেতে পারে।

অবশ্য, যদি সে ব্যক্তি পরিচ্ছন্নতা কর্মী বা রাঁধুনি হন, তবে পরিষ্কারভাবেই বাসা থেকে কাজ করা যুক্তিসঙ্গত নয়। 

এইভাবে, নির্দিষ্ট নীতিমালা নির্দিষ্ট ভূমিকা বা এজেন্টের ওপর প্রযোজ্য হয় এই dīn—এই শাসনব্যবস্থা বা কর্তৃত্বাধীন পরিসরে। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো: কোন কোন শাসনব্যবস্থাগত দিক কোন কোন এজেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

আশা করি বিষয়টি এখন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করছি, যাতে আপনি dīn শব্দটির পূর্ণ অর্থ ও প্রয়োগ সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেন।

এই সব উপাদানই কুরআনে পাওয়া যায়—হ্যাঁ, সবকিছুই—আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কিত: যে দ্বীন আল্লাহ নির্বাচন করেছেন, যেটা তিনি নির্ধারণ করেছেন, এবং যেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

7. Procedures, প্রক্রিয়াসমূহ

What are the procedures?
যেমন ধরা যাক, আপনি যখন একটি দোকানে আসেন, তখন কীভাবে তা খুলবেন? দিনের শুরু কীভাবে করবেন?

হিসাবনিকাশের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, আপনি কি দিনের শুরুতে ইনভেন্টরি নেন? হতে পারে, ইনভেন্টরি দিনের শেষে নেওয়া হয়। অথবা, হতে পারে, প্রতিদিন নেওয়া হয় না—সাপ্তাহিকভাবে নেওয়া হয়। এভাবে অনেক কিছুই হতে পারে।

এই সকল কার্যকরী বিশদ-বিবরণ অবশ্যই শাসনব্যবস্থার অংশ হিসেবে নির্ধারিত থাকতে হবে—যাতে একটি সঠিকভাবে চলমান কাঠামো নিশ্চিত করা যায়।

একটি কার্যকরী কাঠামো—যেমন আমাদের শারীরিক জগৎ, বা আরও বিস্তৃতভাবে বললে, পুরো মহাবিশ্ব, যা কেবল জড় জগতই নয় বরং এমন জগতও অন্তর্ভুক্ত করে যা আমরা ইন্দ্রিয় দ্বারা বা যন্ত্রের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারি না—এই সমস্ত কিছু একটি ব্যবস্থা বা সিস্টেম

আর সেই সিস্টেমটি সঠিকভাবে চলা উচিত।

ইংরেজিতে যেমন একটি প্রবাদ রয়েছে—“the entire machinery must be well-oiled”—অর্থাৎ পুরো যন্ত্র যেন মসৃণভাবে চলে, কর্মক্ষম থাকে, নিয়মিত পরিদর্শন ও যাচাই করা হয়, যেন তা পরিকল্পিতভাবে কাজ করে।

এই সমস্ত বিবরণ—এই সমস্ত কার্যকরী প্রটোকল, যা একটি সিস্টেমকে সঠিকভাবে কার্যকর রাখে—এসবকেই বলা হয় governance, অর্থাৎ শাসনব্যবস্থা।

8. Actions and Their Implications (Results), কাজ ও তার পরিণতি (ফলাফল)

যদি আপনি কোনো কর্ম X সম্পাদন করেন, তবে আপনাকে প্রত্যাশা করা উচিত যে ফলাফল Y ঘটবে। আর যদি কর্ম X-এর পর ফলাফল Y লক্ষ্য করা না যায়, তাহলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া (procedure) থাকে।

তারপর হতে পারে পরবর্তী ধাপগুলো, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা নির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম যা আপনাকে গ্রহণ করতে হবে, সেইসাথে প্রযোজ্য নীতিমালা বা পলিসি।

এভাবে, সমস্ত কিছু সুনির্দিষ্ট এবং ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হয়।

9. Domains of Application for each of the above, উপরোক্ত প্রতিটির প্রয়োগ ক্ষেত্র

প্রত্যেক উপাদানের প্রয়োগ ক্ষেত্র — যেমন আমি আগেই ব্যাখ্যা করেছি — এই ব্যবস্থার প্রতিটি এজেন্ট বা ভূমিকার একটি নির্দিষ্ট ডোমেইন থাকে, একটি নির্দিষ্ট কাজের পরিসর বা এলাকা থাকে, যার মধ্যে সে কাজ করতে পারে। এই সীমানাগুলো স্পষ্টভাবে এবং সঠিকভাবে নির্ধারিত হতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন সংগঠনিক ব্যবস্থায় যেগুলোর সঙ্গে আমি কাজ করেছি, পরিচালনা করেছি বা পরামর্শ দিয়েছি, আমরা একটি বিষয় নির্ধারণ করি যাকে বলা হয় “তথ্য শাসন” (information governance)। এটি কী বোঝায়? এটি বোঝায় যে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য উন্মুক্ত থাকে, কিন্তু অন্যদের জন্য নয়। অর্থাৎ, কোন তথ্য কার জন্য প্রযোজ্য এবং কাদের জন্য নয় — এই সীমারেখা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এখন, কুরআনে “মুলক” (مُلْك) শব্দটি সম্পর্কে আগের অংশে আমি যা ব্যাখ্যা করেছি — সেটি পুনরায় স্মরণ করি: মুলক শব্দটি প্রযোজ্য হয় উভয় ক্ষেত্রেই — শারীরিক অর্থাৎ ইন্দ্রিয় বা যন্ত্রের মাধ্যমে উপলব্ধ জগতের জন্য, এবং সেই জগতের জন্য যা আমাদের শারীরিক অস্তিত্বে উপলব্ধ নয় বা অদৃশ্য।

সুতরাং, মুলক শব্দটি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর ইংরেজিতে আমরা যেটিকে “governance” বা “শাসনব্যবস্থা” বলি, সেটিও উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য — কেন? কারণ কুরআন উভয় ক্ষেত্রের কথাই বলে।

10. Exceptions, ব্যতিক্রমসমূহ

কিছু ব্যতিক্রম কী হতে পারে? উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক একটি নীতিমালায় বলা আছে যে ম্যাকডোনাল্ডস রেস্তোরাঁর একজন ঝাড়ুদারকে সব সময় ডিউটিতে থাকতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চালিয়ে যেতে হবে—অত্যন্ত ব্যস্ত সময় ছাড়া। যখন রেস্তোরাঁটি খুব ব্যস্ত থাকে, এবং সেই সময়টি পরিচালন কাঠামোর আওতায় বা ব্যবস্থাপকের বিবেচনায় স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে, তখন ঝাড়ুদারকে সরে যেতে হবে বা ওই সময়ে কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, তখন রান্নাঘরে প্রচণ্ড কর্মচাঞ্চল্য থাকে, এবং সে সময়ে ঝাড়ুদার যদি মেঝে পরিষ্কার করে—বিশেষ করে যদি মেঝে ভিজে যায়—তাহলে কর্মীদের পা পিছলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়, যা একটি নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করতে পারে।

এটাই হচ্ছে ঝাড়ুদারের দায়িত্ব ও ভূমিকা সংক্রান্ত সাধারণ নীতি ও নিয়ম। এছাড়াও, একজন ঝাড়ুদারের জন্য যেসব দক্ষতা আবশ্যক, সেগুলোও নির্ধারিত যোগ্যতার একটি তালিকা আকারে থাকতে হবে, যেমন XYZ।

তবে, যদি এমন হয় যে ব্যস্ততম সময়ে—যখন রেস্তোরাঁতে সবচেয়ে বেশি ভিড়—হঠাৎ করে এমন কিছু ঘটে যায়, যেমন: মেঝেতে তেলের ছিটে পড়ে যায়? স্বাভাবিকভাবেই, এটি একটি ব্যতিক্রম। এটি সাধারণ রুটিনের অংশ নয়। আমরা জানি, এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না, এবং সাধারণত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগেই নেওয়া থাকে যাতে এমন কিছু না ঘটে। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রক্রিয়াগুলোও নীতিমালার অংশ। কিন্তু যদি দুর্ঘটনাক্রমে তেলের ছিটে পড়ে যায়, তাহলে সেটা কর্মীদের জন্য, এমনকি গ্রাহকদের জন্যও, একটি গুরুতর ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে, ঝাড়ুদারকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে—এমনকি সেটা রাশ আওয়ারের মধ্যেই হোক বা রেস্তোরাঁর ব্যস্ততম মুহূর্তেই হোক না কেন। এই পরিস্থিতিটি সাধারণ নিয়মের একটি ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য হয়।

আপনি দেখতে পাচ্ছেন, ব্যতিক্রমগুলোও অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি রাস্তায় হঠাৎ করে একটি দাঙ্গা শুরু হয়—তাহলে সেটি একটি ব্যতিক্রম। সে ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁ কী করবে? রেস্তোরাঁর ভেতরে যারা কাজ করছেন—যারা এই সাংগঠনিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত—তারা কী করবেন?

আবারও বলছি, শাসনব্যবস্থার (governance) মধ্যে এ ধরনের জরুরি পরিস্থিতি বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য পরিকল্পনা (contingencies) অন্তর্ভুক্ত থাকা আবশ্যক।

কুরআন কি এ ধরনের পরিস্থিতির সমাধান প্রদান করে? নিশ্চয়ই করে। কুরআন নানা প্রকার ঘটনার মোকাবেলায় আমাদের জন্য পদ্ধতি—কখনো স্পষ্টভাবে নির্ধারিত পদ্ধতি—সাথে নীতিমালা, বিধান এবং ভূমিকার সংজ্ঞা দিয়ে থাকে।

কুরআন কি বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরের “সঙ্গী” হওয়া নিয়ে আলোচনা করে? হ্যাঁ।

কুরআন কি একটি সমাজ বা উম্মাহর মধ্যে নেতৃত্বের বিষয়ে কথা বলে? হ্যাঁ।

কুরআন কি কর্তব্য, বাধ্যবাধকতা এবং দায়িত্বসমূহ নির্ধারণ করে? হ্যাঁ।

কুরআন কি পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়? হ্যাঁ।

কুরআন কি আল্লাহর প্রতিষ্ঠিত দীন-এর কাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে আলাদা করে সংজ্ঞায়িত করে? হ্যাঁ, করে।

সুতরাং, কুরআন একটি পূর্ণাঙ্গ শাসনব্যবস্থা—Governance System—যা আমাদের জীবনের নানামুখী দিক এবং সম্পর্কিত ব্যতিক্রম বা বিশেষ পরিস্থিতিগুলোকে কাঠামোবদ্ধভাবে উপস্থাপন করে।

কেন কুরআন নিয়ে পরিশ্রম করা এত গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: কারণ কুরআনই সমস্ত শাসনব্যবস্থার (Governance) দিকসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় পরিভাষা (terminology) এবং ব্যাখ্যা প্রদান করে!

আমাদের জন্য কুরআনে প্রচুর বিশদ বিবরণ প্রদান করা হয়েছে। এজন্যই কুরআনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি — এবং এটি সঠিক পরিভাষা ও পদ্ধতি ব্যবহার করেই করা আবশ্যক।

পরিভাষা (Terminology) যে কোনো শাসনব্যবস্থার (governance) এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। যদি পরিভাষা নিয়ে সবাই একমত না হয় বা শেয়ার করা না থাকে, তবে কায়েমকৃত ‘দ্বীন’ যথাযথভাবে কার্যকর করা অসম্ভব। আমি যখন এসব বলছি, হয়তো কারো মনে হতে পারে, এটি কি অতিরিক্ত বিশদে ঢুকার দরকার ছিল? কুরআনের পক্ষ থেকে কি এটি অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বা হস্তক্ষেপের পরিচয়? আল্লাহ কি প্রতিটি ক্ষুদ্র বিষয়েও হস্তক্ষেপ করছেন?

আসলে, আল্লাহ আমাদের জন্য এমন একটি কাঠামো দিয়েছেন যাতে আমরা নিজেদের সংগঠিত করতে পারি — আমাদের জীবনকে সহজতর করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তিনি এই সকল বিশদ — প্রতিটি সূক্ষ্ম বিষয় যা ‘মুলক’ (শাসন) এর অন্তর্ভুক্ত — আমাদের উপলব্ধি এবং আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডে অবস্থান ও ভূমিকা বুঝতে সাহায্য করে। যখন আমরা এই ঐশ্বরিক নির্দেশনার আলোকে চলতে শুরু করি, তখন পুরো মহাবিশ্ব আরও সুশৃঙ্খল, সুসমন্বিত এবং আল্লাহর সৃষ্টিতে নিহিত কল্যাণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করে।

এটি আমাদেরকে একটি গভীর প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায়: আল্লাহ কেন এই দুনিয়ায় মন্দ বা অপকর্মের অনুমতি দেন?

প্রথমেই আমাদের নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে: আমরা কি আল্লাহর নির্দেশনাগুলো মেনে চলেছি এই ধরনের মন্দ থেকে বিরত থাকার জন্য?
যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে আমরা আরও প্রশ্ন করতে পারি: তাহলে কেন এখনও মন্দ ঘটে?
কিন্তু যদি উত্তর হয় না—অর্থাৎ আমরা ঐশ্বরিক নির্দেশনা অনুসরণ করিনি—তাহলে আমাদের কোনো অধিকার নেই প্রশ্ন করার যে কেন এই দুনিয়ায় মন্দ বিদ্যমান। আশা করি এটি স্পষ্ট।

কুরআনের উপর পরিশ্রম করা — সঠিক জ্ঞানতাত্ত্বিক (epistemological) এবং ব্যাখ্যামূলক (interpretive) পদ্ধতি অনুসরণ করে, যেটি এই চ্যানেলের মূল বিষয় — তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আমাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের শাসনব্যবস্থা (governance) বুঝতে সাহায্য করে। 

উদাহরণ: একটি ম্যাকডোনাল্ড’স রেস্টুরেন্ট
একটি সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত ম্যাকডোনাল্ড’স রেস্টুরেন্টই হচ্ছে “দীন”।

Governance বা শাসনব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে:

1. Terminology and its Definitions, পরিভাষা ও তার সংজ্ঞাসমূহ
2. Roles, ভূমিকাসমূহ
3. Dues & Responsibilities, প্রাপ্য ও দায়িত্বসমূহ
4. Authorities & Domains of Action, কর্তৃত্ব ও কার্যপরিধি
5. Rules, নিয়মাবলি
6. Policies, নীতিমালা
7. Procedures, প্রক্রিয়াসমূহ
8. Actions and Their Implications (Results), কাজ ও তার পরিণতি (ফলাফল)
9. Domains of Application for each of the above, উপরোক্ত প্রতিটির প্রয়োগ ক্ষেত্র
10. Exceptions, ব্যতিক্রমসমূহ

আমরা এখন আরও নির্দিষ্ট কিছু উদাহরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। পূর্বে যে উপমাটি উল্লেখ করা হয়েছিল—একটি ম্যাকডোনাল্ড’স রেস্টুরেন্টের—তা এখন ব্যবহার করব বোঝানোর জন্য যে শাসনব্যবস্থা (governance) কীভাবে একটি সুসংগঠিত কাঠামোর ভেতরে কাজ করে।

ধরুন একটি ম্যাকডোনাল্ড’স শাখায় বেশ কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে: মালিক, ম্যানেজার, টিম লিডার এবং বিভিন্ন কর্মী। যদি এটি কর্পোরেট মালিকানাধীন না হয়, তাহলে এটি সম্ভবত একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি, অর্থাৎ এমন একজন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত যিনি ম্যাকডোনাল্ড’স ব্র্যান্ডের অধীনে একটি শাখা পরিচালনার অধিকার কিনেছেন। এধরনের ফ্র্যাঞ্চাইজি অধিকার পেতে কেউ কেউ এক মিলিয়ন থেকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পরিশোধ করে থাকেন। এর বিনিময়ে কর্পোরেট কোম্পানি ব্র্যান্ডিং, অবকাঠামো, পরিচালন ব্যবস্থা ও সরবরাহ সরবরাহ করে। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক সেই নির্দিষ্ট শাখাটি গঠন ও পরিচালনার জন্য দায়ী থাকেন।

মালিকের অধীনে সাধারণত একজন বা একাধিক ম্যানেজার থাকেন। ম্যানেজাররা টিম লিডারদের তত্ত্বাবধান করেন, যারা বিভিন্ন কার্যকরী অঞ্চলের জন্য দায়ী—যেমন রান্না, ক্যাশিয়ার অপারেশন বা হিসাবরক্ষণ। এই প্রতিটি ভূমিকা, এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত হওয়া আবশ্যক। এ কাজটি করা হয় একটি আনুষ্ঠানিক ম্যানুয়ালের মাধ্যমে—যাকে সাধারণত শাসনব্যবস্থার ম্যানুয়াল (governance manual) বলা হয়—যেখানে নীতিমালা, নিয়মাবলি, দায়িত্ব, পরিভাষা এবং পদ্ধতিসমূহ নির্দিষ্ট করে লেখা থাকে।

এই ম্যানুয়ালটি সাধারণত কর্পোরেট সত্তা—ম্যাকডোনাল্ড’স কর্পোরেশন—দ্বারা সরবরাহ করা হয়, এবং এটি মালিক বা ম্যানেজারের দায়িত্ব থাকে তা যথাযথভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা।

সুতরাং, এই ম্যানুয়ালই হচ্ছে সেই নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টের শাসনব্যবস্থা বা governance। একবার যদি আমরা ওই ব্যবস্থায় নির্ধারিত পদ্ধতি, ভূমিকা ও পরিভাষাগুলি বুঝে যাই, তাহলে বুঝতে পারব কীভাবে একটি “mini-deen”—অর্থাৎ একটি কার্যকর পরিচালন কাঠামো—চলমান থাকে। আমি আশা করি এটি পরিষ্কার।

এই শাসনব্যবস্থার মডেল কেবল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, বরং যেকোনো সৃষ্ট কাঠামো বা সম্পর্কগত সত্তার জন্য প্রযোজ্য।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার পরিবারকে নিন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: আপনার পরিবারে কি কোনো শাসনব্যবস্থা (governance) আছে? সেই শাসনব্যবস্থা কি সংশ্লিষ্ট সবাই পরিষ্কারভাবে বোঝে ও মানে?

দাদু-দাদী বা নানা-নানীরা কি পারিবারিক ভূমিকা ও দায়িত্ব বুঝে থাকেন? শিশুরা কি তা বোঝে? governance-ই হলো সেই নীতি ও কাঠামো যা মানুষদের কেবল একত্রে বসবাস করা থেকে একটি সংগঠিত পরিবারে রূপান্তরিত করে। governance ছাড়া, এটি কেবল কিছু ব্যক্তি একত্রে বসবাস করছে—কোনো কাঠামোবদ্ধ ইউনিট নয়।

যদি আপনি কখনো আপনার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে বসে পারিবারিক শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা না করে থাকেন, তাহলে তারা হয়তো এমন কিছু আচরণ করবে যা আপনার স্থাপন করা কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এতে তারা ভুল করছেন না—তারা কেবল সেই কাঠামোটি জানেন না।

একই কথা প্রযোজ্য শিশুদের বেলায়। যদি তারা এমন আচরণ করে যা আপনার পারিবারিক governance লঙ্ঘন করে, তখন আপনি কী করবেন? কোন পূর্বনির্ধারিত নীতি বা ব্যবস্থা আছে? কিভাবে বিরোধ মীমাংসা করা হবে?—এই সব প্রশ্নের উত্তর দেয় governance।

আপনি যদি কখনো আপনার পরিবার, ব্যবসা বা সামাজিক সম্পর্কগুলোর জন্য শাসনব্যবস্থা গঠনের কথা না ভেবে থাকেন, তাহলে আপনি প্রায়শই বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে পড়বেন। আমাদের অনেকেই—আমি নিজেও—অনেক ভুল করেছি, শুধুমাত্র এই কারণে যে আমরা কখনো এই governance নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবিনি।

তাই বিয়েতে প্রবেশ করার আগে, কোনো কোম্পানি গঠনের আগে, বা কোনো সম্পর্ক শুরু করার আগে—তা আর্থিক হোক বা সামাজিক—এটি বোঝা জরুরি যে প্রতিটি সম্পর্কই একটি সত্তা (entity)। এবং যেকোনো সত্তা কার্যকরভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য শাসনব্যস্থা (governance) দরকার।

সম্পর্ক বা সত্তাটি কার্যকরভাবে চালু হওয়ার আগেই governance গঠিত হলে, তা পুরো বিষয়টি সহজতর করে তোলে। এটি স্বচ্ছতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি করে, বিশেষ করে যখন সংশ্লিষ্ট সবাই শুরু থেকেই সেই শাসনব্যবস্থার সঙ্গে একমত থাকে।

কিছু কুরআনিক পরিভাষার সঙ্গে সম্পর্ক:

আমরা এ পর্যন্ত যে শাসনব্যবস্থা (governance) এর ধারণা আলোচনা করেছি, তা পরিবার, ব্যবসা, এবং পারস্পরিক সম্পর্কের মতো সংগঠিত সত্তাগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এর পরিসর শুধুমাত্র এই উদাহরণগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আসলে, কুরআনিক বয়ান নিজেই একটি শাসন কাঠামোর আলোকে অনুধাবন করা যায়—এবং করা উচিতও।

আমরা কি শাসনব্যস্থার ধারণা প্রয়োগ করে কুরআনিক পরিভাষা ও আল্লাহর বাণীর কাঠামোকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি?
অবশ্যই পারি। বরং, এটি কুরআনের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুধাবন ও অন্তর্গত করার জন্য অপরিহার্য।

কুরআনে আল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত, নির্ধারিত, উৎসাহিত, বা গৃহীত শাসনব্যবস্থা একটি সুনির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত পরিভাষার কাঠামোর উপর নির্মিত। এই পরিভাষা বোঝা কোনো গৌণ বা প্রান্তিক কাজ নয়—এটি ইসলাম বোঝার জন্য মৌলিক।

মুসলিম (مُسْلِم)আত্মসমর্পণকারী: সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর দ্বীন ও তার শাসনব্যবস্থার (Governance) প্রতি আত্মসমর্পণ করে।

মু’মিন (مُؤْمِن)বিশ্বাসী: সেই ব্যক্তি, যে শাসনব্যবস্থার যৌক্তিকতা ও ভিত্তিসমূহ বুঝে এবং গ্রহণ করে।

মুহসিন (مُحْسِن)অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি: সেই ব্যক্তি, যে অন্তত কিছু অংশে শাসনব্যবস্থার সূক্ষ্ম বিবরণ ও প্রয়োজনীয়তার পেছনের উদ্দেশ্য ও প্রেরণা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম।

মালাক (مَلَك) – (বহুবচন: মালাইকা (مَلَائِكَة)): সেই সত্তা, যে শাসনব্যস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্র জুড়ে চলাফেরা ও কার্যসম্পাদন করতে পারে (সব ক্ষেত্র না হলেও)।

আসুন আমরা একটি মূল উদাহরণ বিবেচনা করি: মুসলিম শব্দটি। ইংরেজিতে, এটি সাধারণত আত্মসমর্পণকারী হিসেবে অনুবাদ করা হয়। কিন্তু ঠিক কিসের কাছে আত্মসমর্পণ? একজন মুসলিম হলেন তিনি যিনি দ্বীনের কাছে আত্মসমর্পণ করেন—আল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জীবন, আইন, এবং শাসনের সামগ্রিক ব্যবস্থা। এর অর্থ হল একজন মুসলিম হলেন তিনি যিনি কুরআনের শাসন গ্রহণ করেন এবং তার অধীনে কাজ করেন।

কিন্তু, কেউ কি এমন কিছুর প্রতি আত্মসমর্পণ করতে পারে যা সে নিজেই বোঝে না?
দ্বীন বোঝার প্রথম ধাপ হল—কুরআনের পরিভাষা বোঝা। কুরআনিক শব্দভাণ্ডারের সঠিক অনুধাবন ছাড়া আত্মসমর্পণ অগভীর রয়ে যায়—বা এমনকি ভ্রান্তির শিকারও হতে পারে।

শুধুমাত্র তখনই, যখন কেউ শব্দগুলো যেমন:
মুসলিম, মু’মিন, কাফির, মুনাফিক, দ্বীন, শিরক, তাকওয়া, সবর ইত্যাদি বুঝে ফেলে—তখনই সে বুঝতে পারে যে, আল্লাহ তার ওপর কী কী দায়িত্ব, ভূমিকা, নীতিমালা, কার্যপ্রক্রিয়া, অধিকার ও কর্তব্য আরোপ করেছেন।

একবার পরিভাষা বুঝে গেলে, তখন সেই ব্যক্তি আল্লাহর নির্ধারিত শাসন কাঠামোর ভিতরে থাকা নীতিমালা ও প্রত্যাশাগুলো চিনে নিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • ব্যক্তিগত ফরজ বা বাধ্যবাধকতা,

  • নৈতিক দায়িত্ব,

  • সামাজিক ভূমিকা,

  • এবং পারস্পরিক সম্পর্কের নিয়মনীতি

অন্যভাবে বললে: কেউ যদি পরিভাষা না বোঝে, তাহলে সে যদি মনে করে যে সে “মুসলিম” কী—তা জানে, তবে সে আসলে একটি স্বপ্নের ঘোরে আছে।

উদাহরণস্বরূপ,
“মুসলিম” আর “মু’মিন” এর মধ্যে পার্থক্য কী?
এই পার্থক্যটা অত্যন্ত মৌলিক—কিন্তু অনেকের কাছেই তা অস্পষ্ট, কারণ তারা পরিভাষাগত যথার্থতাকে গুরুত্ব দেয় না। কুরআনভিত্তিক বোঝাপড়া ছাড়া কেউ কখনোই সঠিকভাবে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারবে না—দ্বীনের শাসন কাঠামোর মধ্যে তার ভূমিকা আসলে কী, সেটা সে ধরতেই পারবে না।

একজন মুসলিম হল সেই ব্যক্তি, যিনি স্বেচ্ছায়, নিজের ইচ্ছায়, পূর্ণরূপে বুঝে ও গ্রহণ করে—এই দ্বীনের প্রতি এবং আল্লাহর নির্ধারিত শাসন কাঠামোর প্রতি আত্মসমর্পণ করেন।

এখানে মনে রাখতে হবে, “দ্বীন” শব্দটি বোঝায় এমন একটি সম্পূর্ণ কার্যকরী ব্যবস্থা—যার মধ্যে এই দুনিয়ার বাস্তব জগত তো রয়েছেই, পরকালও এর অন্তর্ভুক্ত। আমি আশা করি, এটি এখন পরিষ্কার।

সেই অনুযায়ী, শাসন কাঠামো বলতে বোঝানো হচ্ছে—নিয়ম, নীতিমালা, কার্যপ্রণালি, পরিভাষা, ভূমিকা, দায়িত্ব ইত্যাদি, যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এক প্রতিষ্ঠিত ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার অংশ।

তাহলে “মু’মিন” শব্দটি মুসলিমের তুলনায় কী আলাদা কিছু বোঝায়?

“মুসলিম” হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি আত্মসমর্পণ করেছেন।

এখন একটা উদাহরণ ধরা যাক—ধরা যাক, একজন ক্লিনার বা ঝাড়ুদার, যিনি একটি McDonald’s রেস্টুরেন্টে কাজ করেন (সব পেশার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে বলছি)।
এই ব্যক্তি হয়তো জানেন না, কিংবা কেয়ারও করেন না, যে একটা বার্গার কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় রান্না করতে হয়। কিংবা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস কতক্ষণ ধরে ফ্রায়ারে রাখতে হয় যাতে সেগুলো ঠিকমতো তৈরি হয়। এগুলো তার জানারও বিষয় না, আগ্রহেরও না।

সে জানে ও মানে যা তার কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।
সে McDonald’s-এর পুরো শাসন কাঠামোর প্রতি আত্মসমর্পণ না করলেও, নিজের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অংশটুকু সে মেনে চলে।
এই ব্যক্তিকে তুলনা করা যায় একজন মুসলিমের সঙ্গে।

অন্যদিকে, একজন মু’মিন হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি পুরো শাসন কাঠামোর যৌক্তিকতা, ভিত্তি, কারণ ইত্যাদি বুঝে ফেলেছেন।
তিনি জানেন কেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে ফ্রায়ারে রাখা হয়,
কেন ফ্রাই করা শেষে তেল ঝরিয়ে তারপর তাতে লবণ দেওয়া হয়,
এই সবকিছুর পেছনে থাকা নীতিমালা ও কারণসমূহ তিনি বোঝেন।

এমন ব্যক্তি শুধু আত্মসমর্পণ করেই থেমে থাকেন না, বরং সচেতনভাবে বিশ্বাস করেন, উপলব্ধি করেন, এবং বোঝেন কেন এভাবে শাসন চলে।

এবং তার চেয়েও উচ্চতর স্তরে রয়েছেন সেই ব্যক্তি,
যিনি এই নিয়মগুলোর ব্যাখ্যা দেন, অথবা নিজে কোনো কোনো নীতিমালার গঠন ও পর্যালোচনায় অংশগ্রহণ করেন—এই ব্যক্তি হচ্ছেন “মুহসিন” বা অন্তর্দৃষ্টিধারী (insight-holder)।

তিনি শুধু একজন মু’মিনের মতো বিশ্বাস করেই থেমে থাকেন না—তিনি বোঝেন এই নিয়ম-কানুন এবং কার্যপ্রণালীগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছে, এর পেছনে কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, কী গবেষণা হয়েছে, কী পর্যালোচনা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি জানেন—কী ধরনের আলু বেছে নিতে হয়, কী তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, কত ডিগ্রি তাপে কতক্ষণ ভাজতে হয়, ব্যাগ থেকে বের করে কীভাবে তেলে দিতে হয়, ইত্যাদি।

এই সমস্ত নিয়ম-কানুন বহু পরীক্ষা, পরীক্ষামূলক রান্না, গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া যাচাই ইত্যাদির মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।
যিনি এসবের পিছনের ঘটনা, ইতিহাস, যৌক্তিকতা—এই গভীরতাগুলো বোঝেন, তিনিই হচ্ছেন “মুহসিন”—অন্তর্দৃষ্টি লাভকারী।

এটি শাসন কাঠামোর এমন এক স্তর, যেখানে ব্যক্তি কেবল নিয়ম মানেন বা বিশ্বাস করেন না—বরং তিনি ব্যবস্থার পেছনের দর্শন ও প্রক্রিয়াটিও বোঝেন

দ্বীনের যেকোনো অংশে কিছু ব্যক্তি বা এজেন্ট থাকেন, যাঁরা অত্যন্ত সচেতন, নিখুঁত ও বিস্তারিতভাবে শাসনের প্রতিটি দিক বাস্তবায়ন করেন—চাই সেটা আল্লাহর নির্ধারিত হোক, অথবা কোনো বিশেষ কাঠামোর (যেমন আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) নির্ধারিত শাসন কাঠামো হোক।

আমি আশা করি, এ পর্যবেক্ষণগুলো এখন পরিষ্কার।

সুতরাং, এখন আমাদের সামনে এক নতুন ফ্রেমওয়ার্ক এসেছে—কুরআনের প্রতিটি শব্দকে বোঝার জন্য একটি শাসনকেন্দ্রিক (governance-based) দৃষ্টিভঙ্গি।

যদি আপনি শাসনের ধারণা না বোঝেন, তাহলে কুরআনের পরিভাষাগুলোর প্রকৃত অর্থও ধরা পড়বে না।

উদাহরণস্বরূপ, কেবল “মালাক” বা “মালাইকা” এই ছোট্ট শব্দেই গভীর তথ্য নিহিত রয়েছে—
যা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আমাদের এই দুনিয়ায় ও আখিরাতে ভূমিকা—সবকিছুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

এটি একটি মন-মুক্তকারী ও দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তারকারী ধারণা—যার মাধ্যমে কুরআনের সাথে এই বিশ্বজগতের সম্পর্ক নতুনভাবে উপলব্ধি করা যায়।

আমরা অনেক সময় শুনি:

“আপনারা কুরআনের ওপর গবেষণা, পরিশ্রম, অধ্যয়নের কথা বলেন—এটা কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ?”

হ্যাঁ, এটি অপরিহার্য—কারণ এর ব্যতীত, আমরা এই জগতে আমাদের নিজস্ব ভূমিকা ঠিকভাবে বুঝতে পারি না।

আমি আশা করি, এটি এখন স্পষ্ট হয়েছে এবং যারা আগে এটা বুঝতেন না, তাদের জন্যও এটা উপকারে এসেছে।

এবার আসি “মালাক” বা “মালাইকা”র ধারণায়:

“মালাক” বা “মালাইকা” এমন কেউ,
যিনি শাসন কাঠামোর একাধিক ক্ষেত্র পেশাগতভাবে সঠিক পথে পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করতে পারেন—সব ক্ষেত্র না হলেও, অনেক ক্ষেত্র।

ধরা যাক আবার McDonald’s-এর উদাহরণ:
একজন কর্পোরেট কর্মী, যিনি গভর্ন্যান্স ম্যানুয়াল লিখেছেন,
তিনি বিভিন্ন কার্যপ্রণালী জানেন এবং বোঝেন।
অথবা, একজন ম্যানেজার যিনি সেই নিয়মগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করেন।

এই ব্যক্তিরাই উদাহরণ হতে পারেন “মালাক” বা **“মালাইকা”**র।

সুতরাং, “মালাইকা” কেবল “আত্মসমর্পণকারী” নন—

তাঁরা হচ্ছেন অভিজ্ঞ, দক্ষ, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন, বিশেষজ্ঞ স্তরের এজেন্ট,
যাঁরা বিশ্বাসও করেন, ব্যাখ্যাও করতে পারেন, এবং বাস্তবে সিস্টেম পরিচালনাও করতে পারেন।

এখন, যেহেতু আমরা মালাইকাʾ ধারণাটি বুঝতে পারলাম, তাহলে কি আমরা এখনো এটির অনুবাদ হিসেবে “ফেরেশতা” বা “angels” শব্দটি ব্যবহার করব?

সম্ভবত করব—এই মুহূর্তে—কারণ এর চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প এখনো নেই।
যদিও, হয়তো আমরা “Governor” শব্দটি ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারি।
কিন্তু “Governor” শব্দটি আধুনিক ব্যবহারে এত নেগেটিভ বা নেতিবাচক ধারণা বহন করে যে আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে পছন্দ করি না।

তাই, আপাতত আমরা “angels” (ফেরেশতা) শব্দটি ব্যবহার করেই যাব—যতক্ষণ না আমরা Malāykaʾ শব্দটির জন্য আরও নির্ভুল ও যথার্থ কোনো অনুবাদ তৈরি করতে পারি বা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারি।

কিন্তু মৌলিকভাবে আমাদের বুঝতে হবে যে Malāykaʾ শব্দটি Malak শব্দের বহুবচন।
এটি এমন কাউকে বোঝায়, যে বহু ক্ষেত্রে গভীরভাবে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ—বিশেষ করে শাসন কাঠামোর একাধিক ক্ষেত্রে।

এবং অবশ্যই, কুরআনের প্রসঙ্গে, এটি বোঝায় আল্লাহ্‌র নির্ধারিত শাসন কাঠামোতে পারদর্শী সত্তাদের।

প্রশ্ন: বাস্তব বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কি “দ্বীন”?
উত্তর: না! বাস্তব বিশ্বব্রহ্মাণ্ড “দ্বীন”-এর একটি অংশ মাত্র।

প্রশ্ন: বাস্তব বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: আমাদেরকে শাসনব্যবস্থা শেখার এবং “দ্বীন”-এর একটি অংশ অনুভব করার সুযোগ প্রদান করা:

  • আমরা একটি খালি স্লেট হিসেবে জন্মগ্রহণ করি
  • আমরা এমন প্রাণী যারা নিজেদেরকে বিকশিত করতে পারি এবং অনেক সীমাবদ্ধতা ছাড়াই বেড়ে উঠতে পারি
  • আমাদের একটি “সীমাবদ্ধ” স্বাধীন ইচ্ছা আছে
  • আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের জ্ঞান হস্তান্তর করতে পারি
  • আমরা যা শিখি তা আমাদের ‘নফস’-এর মধ্যে ধারণ করি, এমনকি পরকালেও: এটি একটি আসক্তি!
  • এই শেষ উপহারটি পরকালে আমাদের নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হতে পারে!

বাস্তব জগতের উদ্দেশ্য কী?
যখনই আমরা কোনও কিছুর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, আমাদের প্রথমে জানতে হয়: “কার জন্য উদ্দেশ্য?” এই প্রশ্নটিই মূল ভিত্তি।

অবশ্যই, আল্লাহর জন্য একটি উদ্দেশ্য রয়েছে—স্রষ্টার দৃষ্টিতে। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে একটি ঈশ্বরীয় অভিপ্রায় স্থাপন করেছেন। আমরা এই দিকটি পরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

কিন্তু আমাদের জন্য আরও জরুরি ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো:
বাস্তব জগতের উদ্দেশ্য আমাদের, মানুষের, জন্য কী?
এটাই মূল প্রশ্ন—কারণ এটি সরাসরি আমাদের অভিজ্ঞতা ও সৃষ্টির ভেতরে আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত।

উত্তরের অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:

বাস্তব জগতের উদ্দেশ্য হলো আমাদের—একটি পৃথিবীভিত্তিক জাতি হিসেবে—শাসনব্যবস্থা শেখার সুযোগ দেওয়া এবং দ্বীনের একটি অংশের অভিজ্ঞতা লাভ করানো।

এর মানে কী?

আল্লাহ চাইলে আমাদের সরাসরি আখিরাতে স্থাপন করতে পারতেন, আমাদের তাত্ক্ষণিকভাবে সচেতন করে তুলতে পারতেন এবং দ্বীনের সম্পূর্ণ রূপ—তার আধ্যাত্মিক ও অস্তিত্বগত বাস্তবতা—আমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দিতে পারতেন, পৃথিবীর জীবনের প্রয়োজন ছাড়াই। তিনি চাইলে আমাদের পূর্ব-অস্তিত্বের জ্ঞানও দিতে পারতেন—যদি আমাদের পৃথিবীতে জন্মের আগে এমন কিছু থেকে থাকে।

কিন্তু তিনি তা করেননি।
বরং, আল্লাহ আমাদের চেতনার শুরু করেছেন আমাদের পৃথিবীতে অস্তিত্বের মুহূর্ত থেকেই। এবং এখানেই প্রশ্ন আসে:
কেন?

উত্তরটি নিহিত রয়েছে এই ঈশ্বরীয় ইচ্ছায় যে আমাদের যাত্রা পৃথিবীতে শরীরের মধ্য দিয়েই শুরু হবে—যা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত আমাদের নাফস (আত্মা) এর সঙ্গে। এই দেহের মাধ্যমে আমরা বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই—শিখি, অনুভব করি, গড়ে উঠি।

আমরা শিখি এই জগত সম্পর্কে—কিন্তু এর মানে কী? আমরা কেন শিখব এই জগতের কথা?

এই জগৎ একটি sandbox বা বালুকাক্ষেত্রের মতো—একটি স্পর্শযোগ্য, ব্যবহারযোগ্য স্থান, যেখানে আমরা শিখি পরিভাষা, অর্থ, কার্য-কারণ সম্পর্ক এবং শব্দার্থিক সম্পর্ক। উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনি দেখতে পান একটি আপেল গাছ থেকে পড়ে যাচ্ছে, তখন আপনি “পড়া” শব্দের বাস্তব অর্থ শিখেন। পরবর্তীতে, যখন আল্লাহ “পড়া” শব্দটি ব্যবহার করেন একটি বিমূর্ত, ধারণাগত অর্থে—যেমন মর্যাদা থেকে পতন—তখন আপনি সেই মৌলিক গতি বুঝে তার বিমূর্ত রূপটি উপলব্ধি করতে পারেন।

সুতরাং, বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আমরা বিমূর্ত চিন্তার ভিত্তি গঠন করি। আমরা চলি দৃশ্যমান থেকে অদৃশ্যের দিকে। পরিমাপযোগ্য থেকে ধারণাগত দিকে। এটাই আল্লাহ কেন এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আমরা শুরু করি ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করে—বা যন্ত্রের সাহায্যে—এবং সেই মৌলিক তথ্য থেকে আমরা শব্দার্থ আহরণ করি। এরপর, এই শব্দার্থ বুঝে আমরা বিমূর্ত চিন্তা নির্মাণ করি—যার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরীয় ভাষা, নির্দেশনা ও ধারণা ব্যাখ্যা করি। কুরআনিক পরিভাষায়, এটি হলো পারাপারের প্রশিক্ষণ: দৃশ্যমান থেকে ভাবগত, বাস্তব থেকে আধ্যাত্মিক।

এই বিমূর্তকরণ ক্ষমতা—এই চেতনা—মানবজাতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
মানবেরা হলো ভাষা-নির্ভর প্রাণী। আমরা ভাষা ও পরিভাষা ব্যবহার করি—শুধু এই জীবনে নয়, মৃত্যুর পরও তা অব্যাহত থাকে। ভাষা একটি ঈশ্বরীয় দান, যা আমাদের যুক্তি, উপলব্ধি ও ব্যাখ্যার কাঠামো গঠনে সাহায্য করে।

এই নীতিটি একবার বুঝে গেলে, আমরা জগতের ভূমিকা বুঝতে পারি: এটি একটি প্রশিক্ষণক্ষেত্র, একটি আত্ম-উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম। আমরা শুরু করি একটি ফাঁকা পাতার মতো—যেমন আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেন:

“তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে যখন বের করে আনলেন, তখন তোমরা কিছুই জানতে না।”
—(কুরআন)

এই ফাঁকা পৃষ্ঠা থেকে আমরা সম্ভাবনা লাভ করি: আত্মোন্নয়ন, জ্ঞান অর্জন, চরিত্র গঠন, বোধের বিকাশ।

উদাহরণস্বরূপ, এখন আমি যখন “আত্মোন্নয়ন” বলি, আপনি এই শব্দের অর্থ বুঝতে পারেন। কিন্তু এই বোঝাপড়া প্রথমে এসেছে “উন্নয়ন”-এর কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে—বৃদ্ধি, পরিবর্তন, সময়ের সঙ্গে কিছু গড়ে ওঠা। সুতরাং, আমরা বাস্তব রেফারেন্স ব্যবহার করেই আধ্যাত্মিক ও বিমূর্ত অর্থে পৌঁছাই।

তাই, এই বাস্তব জগতের একটি কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য হলো আমাদের চিন্তাগত স্তরে পারাপারের জন্য প্রস্তুত করা। এটি হলো মেধা ও আত্মার জন্য ঈশ্বরীয় প্রশিক্ষণক্ষেত্র।

মানুষ হিসেবে আমরা বিশাল পরিমাণ স্বাধীনতা পেয়েছি—সীমাবদ্ধ, কিন্তু বিস্তৃত—যার মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি, উন্নত হতে পারি, ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করতে পারি। হ্যাঁ, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। আপনি নিজেকে ৮০ ফুট লম্বা বানাতে পারবেন না। বাস্তব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু আমরা সীমিত স্বাধীন ইচ্ছা পেয়েছি—আর সেই সীমার মধ্যেই আমাদের শেখা, বেছে নেওয়া, বিকশিত হওয়া প্রত্যাশিত।

আমাদের জন্য একটি দায়িত্ব নির্ধারিত হয়েছে:
নিজেকে উন্নত করা, এবং অন্যের উন্নয়নে সহায়তা করা।

এই আত্মোন্নয়নকে বলা হয় সালাত: ঈশ্বরীয় জ্ঞানের সংস্পর্শে এসে নিজের অস্তিত্বকে উন্নীত করা।

অন্যদের উন্নয়নে সহায়তাকে বলা হয় যাকাত: জ্ঞান হস্তান্তর, মন বিকাশ, সুযোগ উন্মোচনের মাধ্যমে অপরের বিকাশ ঘটানো।

এই কারণেই কুরআনে সালাত ও যাকাত একসঙ্গে বারবার উচ্চারণ করা হয়।
এগুলোই মানব জীবনের দুই মূল ভিত্তি:

১. নিজের ভেতরের উন্নয়ন ঘটানো
২. অপরের উন্নয়নের সহায়ক হওয়া

এটাই এই জগতে আমাদের অস্তিত্বের মূল উদ্দেশ্য।


কিন্তু এর আরও বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে।

আমরা যে জ্ঞান অর্জন করি, তা বহন করে নাফস

আমরা এই দুনিয়ায় যা কিছু শিখি, তা নাফস—আমাদের অদৃশ্য, অশরীরী আত্মার মধ্যে সংরক্ষিত থাকে। এই দেহে অর্জিত জ্ঞান ধ্বংস হয় না; বরং তা আমাদের সঙ্গে থেকে যায় আখিরাতেও। এই জ্ঞান আমাদের অস্তিত্বের অংশ হয়ে ওঠে।

তাই শেখার প্রক্রিয়াটিও তৈরি করে একধরনের সংযুক্তি (attachment)
এই সংযুক্তি নিরপেক্ষ নয়।
এটি হতে পারে:

  • উন্নয়নের উৎস, অথবা

  • যন্ত্রণার কারণ।

যদি আপনি মিথ্যা কিছু শিখেন, বা ভুল উৎস থেকে জ্ঞান গ্রহণ করেন, এবং তা ধারণ করে ফেলেন—তাহলে সেই সংযুক্তিই আখিরাতে আপনার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এবং এখানেই আসে একটি গভীর সতর্কবার্তা:
এই ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞান ধারণ ও আত্মস্থ করার ক্ষমতা—যদি ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে সেটিই হতে পারে আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু।

যদি আপনি আখিরাতে গিয়ে এমন কোনও ভুল বিশ্বাস আঁকড়ে ধরেন—যা ভুল, কিন্তু আপনার সেই ভুলটি প্রশ্ন করার, সন্দেহ করার, বা পুনরায় মূল্যায়নের ক্ষমতা না থাকে—তাহলে আপনি পড়বেন এক অদৃশ্য শাস্তির ফাঁদে, যাকে কুরআন বলে আল-ʿআযাব (العذاب)

আপনি হয়ে যাবেন সেই মৌমাছির মতো, যা বারবার কাঁচে ধাক্কা খাচ্ছে—কিন্তু জানে না সামনে একটা অদৃশ্য বাধা আছে।

এটি আল্লাহর আরোপিত শাস্তি নয়—আপনি নিজেই নিজেকে শাস্তি দিচ্ছেন

কেন?

কারণ আপনি উন্নয়ন করেননি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাটি:

  • ভুল শেখা ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা (Unlearn করার ক্ষমতা)

  • নিজেকে পুনর্মূল্যায়নের বিনয় (Humility)

  • নিজের ‘কাপ’ খালি করার সাহস (Empty your cup)

এই কারণেই আমরা বারবার বলি:

শিখুন → ভুল শেখা ভুলে যান → আবার শিখুন (Learn → Unlearn → Relearn)

জ্ঞানার্জনের পথে বিনয় নিয়ে আসুন।
জানুন, আজ যেটা বিশ্বাস করছেন—আগামীকাল সেটা ভুল প্রমাণিত হতে পারে।
এবং জানুন, যদি আপনি যাচাই, বিশ্লেষণ ও সংশোধন করার ক্ষমতা অর্জন না করেন—তাহলে আপনি নিজেই নিজের মানসিক কারাগারে বন্দী হয়ে যাবেন—এই দুনিয়াতেও, আখিরাতেও।

এটাই চূড়ান্ত বিপদ।
এবং এটাই এই জগতের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য:

আপনাকে শেখার ও ভুল শেখা ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ দেওয়া—যাতে আখিরাতে আপনি অন্ধভাবে ভুল পুনরাবৃত্তি না করে, ঈশ্বরীয় সত্যের দিকে সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হতে পারেন।

এই চ্যানেল—এর মূল বিষয়বস্তু ঠিক এটিই: আমরা বারবার নিজেকে মূল্যায়ন করি ও পুনরায় যাচাই করি, যেন বুঝতে পারি, প্রচলিত ইসলামি বর্ণনা ও বয়ানে যা আমাদের শেখানো হয়েছে, তা কি সত্যিই সঠিক কিনা, কুরআনে বর্ণিত শাসনব্যবস্থার আলোকেই।

আশা করি বিষয়টি পরিষ্কার। এই চ্যানেলের মূল উদ্দেশ্যই এটি—আমরা আপনাকে এমন উপকরণ সরবরাহ করি যা এই দক্ষতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। আপনি যদি শেখা জিনিস ভোলার চেষ্টা করে নতুনভাবে শিখতে চান, নিজের ‘কাপ’ খালি করে তা নতুন ও বিশুদ্ধ উপলব্ধি দিয়ে পূর্ণ করতে চান—যেগুলি আরও নিখুঁত ও যথোপযুক্ত—তাহলে এই পথ আপনার জন্য।

আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আপনার জগৎদৃষ্টিতে আরও পরিশীলিত উপলব্ধি এনে দেওয়া। আমি আশা করি ধারণাটি স্পষ্ট। আমরা এই অংশে যে চিন্তাগুলো উপস্থাপন করছি, তা গভীরভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এই উপস্থাপনার শেষের দিকে এসে আমি জানতে চাই, কেউ কি কোনো প্রশ্ন করতে চান?

উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা কোনো উপলব্ধি অর্জন করি, সেটি কি আমাদের সাথে থেকে যায়—যদিও আমরা কুরআনের নির্দিষ্ট আয়াতগুলো ভুলে যাই যেগুলো আমরা মুখস্থ করেছিলাম?

হ্যাঁ, আমরা যেগুলো মুখস্থ করেছি তা আমাদের সাথে যায়। এ কারণেই, জীবদ্দশায় কুরআনকে সঠিকভাবে বোঝা আমাদেরকে এমন এক সম্ভাবনা দেয়—যা পরকালেও সেই উপলব্ধিকে ধরে রাখার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু কুরআন মুখস্থ করা, অথচ তা না বোঝা—তা কোনো অর্থ বহন করে না। এটি এমনই যেন আপনি এমন বই বহন করছেন যার ভিতরের কথা আপনি বুঝেন না—এর কী মূল্য?

উপলব্ধি বা অনুধাবন, কেবল মুখস্থ করার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।

যেমন আমি আগে বলেছি, এই চূড়ান্ত উপহার—এই দুনিয়ার জীবনে যা আমরা সত্যিকারে শিখেছি, যা আমাদের অস্তিত্বের অংশ হয়ে গেছে, তা পরকালেও আমাদের সাথে বহন করার সক্ষমতা—এটি এক গভীর বিষয়। আমরা তা বহন করি।

কিন্তু এই উপহারই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়ে পরিণত হতে পারে, যদি আমরা এই দুনিয়ায় থাকাকালীন শেখা জিনিস ভোলার চেষ্টা করা এবং নতুন করে শেখার সক্ষমতা অর্জন না করি।

প্রশ্ন: পরকাল কি “দ্বীন”-এর অংশ?
উত্তর: হ্যাঁ! নিশ্চিতভাবে

প্রশ্ন: এই বাস্তব বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং পরকালের মধ্যে কি যোগাযোগ আছে?
উত্তর: হ্যাঁ! নিশ্চিতভাবে।
এই বাস্তব বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে একটি নফস পরকাল থেকে এক বা একাধিক নফসের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
এবং এর বিপরীতও!

মৃত্যুর পর আমাদের নাফসের কী হয়?
উত্তর: আমরা হয় আল-হিছাব-এ যাই, অথবা আল-ফিরদাউস-এ, অথবা জাহীম-এ।

১. যারা শাসনব্যবস্থা (Governance) সম্পর্কে শিখেছে, তারা আল-হিছাব ছাড়াই সরাসরি আল-ফিরদাউস-এ যেতে পারে।
২. আর যারা শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে শেখেনি, তাদেরকে আল-হিছাব-এর সময় শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে শিখতে হবে!

কুরআন এই সমস্ত কথাকেই সমর্থন করে।
যেমনটি আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি, আপনি সরাসরি জাহীম-এ চলে যেতে পারেন।
আমরা জাহীম সংজ্ঞায়িত করেছি এইভাবে—এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে চোখ পুরোপুরি খোলা, কিন্তু চারপাশে ঘোর অন্ধকার।

হ্যাঁ, আপনি মৃত্যুর পরপরই জাহীম-এ প্রবেশ করতে পারেন।

আল্লাহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেন, হিসাব (জবাবদিহিতা) এমনকি এই দুনিয়াতেই শুরু হতে পারে

এই জীবনে হিসাব শুরু হতে পারে—এর মানে কী?

এর অর্থ হলো, আপনি দুনিয়ার জীবনেই জাহীম-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন।

আমরা আমাদের জাহান্নাম-বিষয়ক আলোচনায় এটি সংজ্ঞায়িত করেছি এইভাবে—
এটি হলো এক ধরনের জোড়া সংযোগ (pairing), যেখানে একদিকে থাকে জাহীম-থেকে আসা একটি নাফস, আর অপরদিকে থাকে একজন দুনিয়াবি মানুষ বা নাফস
এই এক-প্রতি-এক বা এক-প্রতি-একাধিক সংযোগকেই কুরআনে জাহান্নাম বলা হয়েছে।

অতএব, সেখানে থাকা সম্ভব—সেই অবস্থায় পড়ে যাওয়া সম্ভব—এবং খুব, খুব, খুব দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে থেকে যাওয়া সম্ভব। এমনকি তা অনন্তকাল পর্যন্তও হতে পারে।

তবে, কিছু পথ রয়েছে—কিছু উপায় রয়েছে—যার মাধ্যমে কেউ জাহীম থেকে মুক্তি পেতে পারে।

আল্লাহ কুরআনে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।

ইনশা’আল্লাহ, ভবিষ্যতে আমরা এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে আলোচনা করব।

আর কী হতে পারে?

আপনি সরাসরি জাহীম-এ নয়, বরং তৎক্ষণাৎ আল-ফিরদাউস-এ প্রবেশ করতে পারেন।

আল-ফিরদাউস হল এমন এক অবস্থা, যেখানে কেউ আল্লাহর সান্নিধ্যে আল্লাহর পরিভাষা এবং শাসনব্যবস্থা বোঝার সক্ষমতা আরো বেশী করে অর্জন করে।

তাহলে এই বিভিন্ন স্তরের মধ্যে পার্থক্য কী?

যারা আগে থেকেই ঈশ্বরীয় শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছে, যারা এতে সুদক্ষ—তারা সরাসরি আল-ফিরদাউস-এ অগ্রসর হতে পারে।
তারা দেহগত সীমাবদ্ধতা ছাড়াই নিজেদের শিক্ষা ও আত্মোন্নয়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

এ ধরনের ব্যক্তি দেহগত বাস্তবতার ব্যাকরণ থেকে শুরু করার প্রয়োজনীয়তা অতিক্রম করে ফেলেছে। তারা আর ভৌত রেফারেন্স থেকে শুরু করে বিমূর্ত ও উচ্চতর উপলব্ধির দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রাথমিক ধাপের মুখাপেক্ষী নয়।

আশা করি এটা পরিষ্কার।

তারা পার্থিব দেহভিত্তিক অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা ছাড়িয়ে গেছে। তাই তারা আল-ফিরদাউস-এ প্রবেশের জন্য উপযুক্ত।

তারা রক্ষা প্রাপ্ত—তারা নিরাপদ—জাহীম-এর মতো অবস্থায় পদদলিত হওয়ার ভয় থেকে তারা মুক্ত।
তারা সেই বিপদের বাইরে রয়েছে।

যারা এই পার্থিব জীবনে শাসনব্যবস্থা (Governance) সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করেনি, তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে শিখতে হবে আল-হিছাব-এ—অর্থাৎ বিচারের মধ্যবর্তী পর্যায়ে।

কেন?

কারণ কেবল তারাই আল-ফিরদাউস-এ সরাসরি অগ্রসর হওয়ার অনুমতি পায়, যারা সিস্টেমটি বুঝে—যারা জানে এটি কীভাবে কাজ করে, কীভাবে পরিচালিত হয়।
তাদেরকে সেই ধারাবাহিকতা দেওয়া হয়, কারণ তাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে।

আর আল-ফিরদাউস-এ থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব কী?

তাদের দায়িত্ব হলো ঈশ্বরীয় ব্যবস্থাকে সচল রাখা—তার কার্যক্রমে সহায়তা করা।
যদি কেউ সিস্টেমটি কীভাবে কাজ করে তা না বোঝে, তার অস্তিত্ব সম্পর্কেই অজ্ঞ থাকে, বা তার শাসনব্যবস্থা, পরিভাষা, বিধান এবং অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে—তাহলে সে আল-ফিরদাউস-এ কী উপকারে আসবে?

সে প্রস্তুত থাকবে না।

তাই, তাকে আল-হিছাব-এ প্রবেশ করতে হয়—এই মধ্যবর্তী পর্যায়ে, যেখানে তাকে শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে পর্যাপ্ত উপলব্ধি অর্জন না করা পর্যন্ত স্থগিত অবস্থায় থাকতে হয়।

এখন ভাবুন, যদি যেকোনোভাবেই আল-হিছাব-এ গিয়ে শাসনব্যবস্থা শিখতেই হয়—তাহলে এটা কি ভালো নয়, এই পার্থিব জীবনেই তা জেনে নেওয়া?

অবশ্যই ভালো।

এই জীবনে কি আপনার সুযোগ আছে Governance সম্পর্কে জানার?

হ্যাঁ, অবশ্যই। আপনার কাছে কুরআন আছে।

এই কারণেই এই চ্যানেলটি প্রতিষ্ঠিত—আপনাকে এই সক্ষমতা ও বোধ অর্জনে সহায়তা করার জন্য

এটি ছাড়া, আপনাকে তা শিখতেই হবে—কিন্তু আরও কঠিন এবং অনুকূলতা-বিহীন পরিস্থিতিতে

আল-হিছাব-এ অবস্থানকারীদের কুরআনে প্রবেশাধিকার নেই।
তবে তারা কীভাবে শিখে?

তারা শিখে একজন Earthling-এর সংযোগের মাধ্যমে—এই পৃথিবীর এমন একজন ব্যক্তি, যিনি তাদেরকে সে জ্ঞান অর্জনে দিকনির্দেশনা ও সহায়তা দিতে পারেন।

এই মহাবিশ্বে আমাদের ভূমিকা কী?
উত্তর: আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে:


১. পৃথিবীবাসী (Earthlings) হিসেবে:
ক. আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে—এমনকি সরাসরি আল্লাহ থেকেও শিখি (সালাত) এবং আত্মউন্নয়ন করি।
খ. আমরা অন্যদের শিক্ষা দিই (যাকাত), যার মধ্যে আখিরাতের আনফুস ও নুফূস-ও রয়েছে।


২. আখিরাতে আনফুস হিসেবে (আল-ফিরদাউস-এ):
ক. আমরা শিখতে ও আত্মউন্নয়ন চালিয়ে যেতে পারি।
খ. আমরা অন্য আনফুস-দের শিখতে ও আত্মউন্নয়ন করতে সাহায্য করতে পারি।


৩. আখিরাতে নুফূস হিসেবে (আল-হিছাব বা মা বাইনাহুমা-তে):
ক. আমরা অপেক্ষা করি যতক্ষণ না আমাদের আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, যাতে আমরা নতুন করে কিছু Earthlings-এর কাছ থেকে শেখার জন্য প্রস্তুত হতে পারি।
খ. আমরা আল-হিছাব থেকে আল-ফিরদাউস-এ প্রবেশ করি কেবল তখনই, যখন আমরা শাসনব্যবস্থা (Governance) সম্পর্কে কিছু মূল জ্ঞান অর্জনে দক্ষতা অর্জন করি।


৪. যারা জাহীম-এ রয়েছে, তারা কোয়ারান্টিন অবস্থায় (হিজর):
তাদেরকে “দ্বীন”-এর কোনো অংশের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়—যতক্ষণ না আল্লাহ নিজেই অন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেন।

আমাদের ভূমিকা কী?

পৃথিবীবাসী হিসেবে—অর্থাৎ এই পার্থিব অস্তিত্বে—আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।

আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে শিখি এবং নিজেদের উন্নয়ন করি, যার মধ্যে রয়েছে—এবং এ কথা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলা প্রয়োজন—সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া।

হ্যাঁ, কুরআন আমাদের এই নিশ্চয়তা দেয়: আমাদের কোনো মধ্যস্থতাকারীর উপর নির্ভর করতে হবে না।

আমাদের অন্য কারো ওপর নির্ভরশীল হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

প্রকৃতপক্ষে, যারা কুরআন অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের জন্য সরাসরি এই সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন।

আল্লাহ এই কিতাব সংরক্ষণ করেছেন যাতে আমরা এটি সরাসরি তার সাথে যোগাযোগের একটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।

এবং আল্লাহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন।

সবকিছু নির্ভর করে আমরা সত্যিই শুনছি কিনা—এবং আমরা পরিভাষাগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারছি কিনা।

আমাদের অস্তিত্বের দ্বিতীয় অংশ হলো অন্যদের শিক্ষা দেওয়া।

প্রথম দায়িত্ব হলো সালাত

দ্বিতীয়টি হলো যাকাত

কতই না সুন্দর এক আবিষ্কার—এবং কত গভীর ব্যাখ্যা—এই মূল শব্দগুলোকে, যা পুরো ঈশ্বরীয় শাসনব্যবস্থার অন্তর্গত অর্থ বুঝবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আল-ফিরদাউস এমন এক অবস্থা যেখানে কেউ পিষিত বা পদদলিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে মুক্তি পায়।

অর্থাৎ, আপনি জাহীমের সীমা পার হয়ে গেছেন—আপনি জাহীম থেকে নিরাপদ।

এই পরিবর্তন ঘটে সরাসরি শারীরিক মৃত্যু হওয়ার পরেই।

আমাদের মধ্যে অনেকের জন্য, শারীরিক মৃত্যুর পরে আমরা আখিরাতে নুফূস হয়ে যাই।

কুরআনে এই অবস্থাকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন একটি স্তরের মধ্যে অস্তিত্ব হিসেবে, যা বোধগম্যতার স্তরসমূহের এবং এই কিতাবের মাঝে অবস্থিত।

আশা করি এটা এখন সত্যিই পরিষ্কার।

এই সমস্ত পরিভাষা জীবন্ত হয়ে ওঠে যখন আমরা বুঝতে পারি কুরআন কী সম্পর্কে কথা বলছে—এটি কী নির্দেশ করছে।

একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী আছেন যারা আল-হিছাব এ স্থগিত থাকে, অপেক্ষা করে যতক্ষণ না তারা আল-ফিরদাউস এ উন্নীত হয় বা জাহীম এ নেমে যায়।

এটাই তাদের দ্বিতীয় সুযোগ—আপনি চাইলে এটাকে দ্বিতীয় সুযোগ বলতে পারেন—কিন্তু এটা অনেক কঠিন দ্বিতীয় সুযোগ।

তাই, আখিরাতে আনফুস হিসেবে ফিরদাউসে আমরা শিখতে এবং নিজেদের উন্নত করতে থাকি।

অবশ্যই, এই উন্নয়ন আল্লাহর আরো কাছে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যায়।

এর মানে কী?

আল্লাহর জ্ঞান অসীম, এবং আপনি যত বেশি বোধ অর্জন করবেন, আল্লাহর কাছে ততই নিবিড় হবেন।

আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট এই সিস্টেম এবং আল্লাহর সম্পর্কে আপনি যত বেশি জ্ঞান অর্জন করবেন, ততই আপনি আল্লাহর কাছে আরো ঘনিষ্ঠ হবেন।

মালাইকা (ফেরেশতা) কুরআনে বর্ণিত হয়েছে তায়র হিসেবে (পাখি বা যারা উড়ে চলেন)।

তারা অবিরাম উপরের দিকে উড়ে চলেন।

আল-ফিরদাউসের লোকেরা মালাইকা হওয়ার প্রার্থী—যদি তারা ইতিমধ্যে না হয়ে থাকে।

আল্লাহ তাদের মালাইকা হিসেবে নির্বাচন ও নিয়োগ করেন।

এর মানে কী?

তারা মুল্ক (ঈশ্বরীয় শাসনব্যবস্থা) এ দক্ষ—তাদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ।

সমস্ত মুল্কের ক্ষেত্রে নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে।

তারা যত বেশি জানে এবং বুঝতে পারে, ততই তারা আলঙ্কারিকভাবে (ভাবগতভাবে) উচ্চতর ও আল্লাহর আরো কাছে চলে যায়—শারীরিকভাবে নয়।

এটাই মালাইকা হওয়ার অর্থ—তাদেরকে বর্ণনা করা হয় — যারা উড়ে চলেন।

এটি একটি চমৎকার ধারণা—
একটি অসাধারণ মডেল—
এবং এটি এই দুনিয়ার জীবনে আমাদের উপলব্ধি ও বোধের সক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

এটি একেবারেই ভিন্ন একটি পদ্ধতি, ঐ পরকালের মডেলের তুলনায়,
যা আমাদেরকে বাইবেল ভিত্তিক সূত্র থেকে শিখানো হয়েছে—
যেখানে বলা হয়, তুমি কবরে যাবে, তারপর শুধু অপেক্ষা করবে আর অপেক্ষা করবে…
কবে সেই মহাজাগতিক দিন আসবে, তা কেউ জানে না।

কিছু তথাকথিত স্কলার, যারা মজার ধরনের টুপি পরে,
তারা “শেষ সময়” নিয়ে কথা বলে,
কিন্তু তারা কী নিয়ে কথা বলছে সেটা নিজেরাও ভালো করে বোঝে না।

তারা এসব ধারণাকে একে অপরের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে—
আর মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করে ফেলে,
যখন তারা ভাবে, তারা তাদের শিক্ষা দিচ্ছে, প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সাহায্য করছে।

যাই হোক, আপনি জানেন আমি কার কথা বলছি।

অবশেষে, যারা জাহীমে আছে, তারা একপ্রকার কোয়ারান্টাইনে থাকে।

এর মানে কী?

কুরআনে একে বলা হয়েছে হিজর—একটি প্রকৃত কোয়ারান্টাইন।
তারা আলাদা করে রাখা হয়, সৃষ্টি জগতের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।
কেন?
কারণ তারা সংক্রামক। তাদের চিন্তাভাবনা রোগাক্রান্ত।

এই লোকেরা কারা?

তারা সেইসব মানুষ, যারা প্রথম থেকেই আল্লাহকে অস্বীকার করেছে।

আমি একেবারে স্পষ্ট ও নির্লজ্জভাবে বলছি:
যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য—আল্লাহর গঠিত ব্যবস্থার কোনও অংশে—কোনও স্থান নেই, কোনও প্রবেশাধিকার নেই।

তাই, পরকালীন জগতে তারা কোয়ারান্টাইনে থাকে।
তাদেরকে দ্বীন অর্থাৎ আল্লাহর শাসিত ব্যবস্থার কোনও অংশের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া বা কোনোরকম সম্পৃক্ততা থেকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়—যতক্ষণ না আল্লাহ নিজেই অন্যভাবে সিদ্ধান্ত নেন।

আমরা সেই সিদ্ধান্ত আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিই। আমরা জানি না।

আর আমরা বলি, “যতক্ষণ না আল্লাহ সিদ্ধান্ত নেন,” কারণ আমরা আল্লাহর রহমতের ওপর ঈমান রাখি।
শেষ পর্যন্ত—একদিন—এই লোকদের কেউ কেউ মুক্তি পেতে পারে।
আমরা নিশ্চিত নই, তবে কুরআনে এমন কিছু ইঙ্গিত আছে, যা থেকে এই সম্ভাবনার আভাস মেলে।

এই ভৌত জগতে আমাদের মূল ভূমিকা কী?

১. নিজেকে উন্নত করা
২. অন্যদের তাদের আত্ম-উন্নয়নে সহায়তা করা
৩. এই ভৌত জগৎকে এমনভাবে প্রস্তুত করা, যাতে তা আমাদের পরকালের জন্য যতটা সম্ভব অনুকূল হয়!

অন্যভাবে বললে—এই ভৌত জগৎকে ভালো অবস্থায় সংরক্ষণ করা, আসলে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই!

নংসূরার নামমোট আয়াতঅনুবাদ করা হয়েছে
1আল- ফাতিহা77
2আল-বাকারা28664
3আল-ইমরান20056
4নিসা17632
5আল-মায়িদাহ12035
6আল-আনাম16535
7আল-আরাফ20662
8আল-আনফাল7511
9আত-তাওবাহ1298
10ইউনুস10925
11হুদ12325
12ইউসুফ111111
13আর-রাদ4310
14ইবরাহীম526
15আল-হিজর9918
16আন-নাহল12838
17বনি ইসরাইল11129
18আল-কাহফ11074
19মারিয়াম9853
20ত্বা হা13539
21আল-আম্বিয়া11239
22আল-হাজ্ব7811
23আল-মুমিনুন11832
24আন-নূর646
25আল-ফুরকান7744
26আশ-শুআরা22735
27আন-নমল9356
28আল-কাসাস8828
29আল-আনকাবুত6914
30আল-রুম6034
31লুকমান3424
32আস-সাজদাহ309
33আল-আহযাব7335
34আস-সাবা547
35আল-ফাতির4510
36ইয়া সিন8383
37আস-সাফফাত18252
38সোয়াদ8839
39আয-যুমার7533
40আল-মুমিন8520
41ফুসসিলাত5420
42আশ-শূরা539
43আয-যুখরুফ8935
44আদ-দুখান5919
45আল-জাসিয়াহ3712
46আল-আহকাফ3517
47মুহাম্মদ3813
48আল-ফাতহ299
49আল-হুজুরাত184
50ক্বাফ4524
51আয-যারিয়াত6017
52আত-তুর493
53আন-নাজম6262
54আল-ক্বমর5519
55আর-রাহমান7878
56আল-ওয়াকিয়াহ9696
57আল-হাদিদ297
58আল-মুজাদিলাহ222
59আল-হাশর243
60আল-মুমতাহানা132
61আস-সাফ146
62আল-জুমুআহ115
63আল-মুনাফিকুন111
64আত-তাগাবুন182
65আত-ত্বালাক121
66আত-তাহরীম126
67আল-মুলক308
68আল-ক্বলম528
69আল-হাক্ক্বাহ5219
70আল-মাআরিজ444
71নূহ286
72আল-জ্বিন2828
73মুযাম্মিল202
74মুদাসসির561
75আল-কিয়ামাহ4023
76আল-ইনসান3131
77আল-মুরসালাত5050
78আন-নাবা4040
79আন-নাযিয়াত463
80আবাসা4242
81আত-তাকবির2929
82আল-ইনফিতার1919
83আত-তাতফিক367
84আল-ইনশিকাক2525
85আল-বুরুজ222
86আত-তারিক1717
87আল-আলা190
88আল-গাশিয়াহ261
89আল-ফজর304
90আল-বালাদ207
91আশ-শামস1515
92আল-লাইল210
93আদ-দুহা111
94আল-ইনশিরাহ88
95আত-তীন81
96আল-আলাক1919
97আল-ক্বাদর55
98আল-বাইয়িনাহ83
99আল-যিলযাল88
100আল-আদিয়াত1111
101আল-কারিয়াহ110
102আত-তাকাছুর88
103আল-আসর30
104আল-হুমাযাহ99
105ফীল55
106আল-কুরাইশ41
107আল-মাউন70
108আল-কাওসার30
109আল-কাফিরুন60
110আন-নাসর30
111লাহাব55
112আল-ইখলাস40
113আল-ফালাক55
114আন-নাস66
  62362307